কিভাবে ব্লগিং করে সফল হওয়া যায়, ব্লগিং এ সফল হওয়ার উপায় Blogging Success Tips Bangla

আমাদের তরুণ প্রজন্মের এমন অনেক যুবক যুবতীরা সদ্য ব্লগিং শুরু করেছে বা শুরু করার কথা ভাবছে। যারা ব্লগিং ‍শুরু করেন নাই তারা ইউটিউব দেখে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে শিখে নিবেন কিভাবে ব্লগিং শুরু করতে হয়? কিভাবে ব্লগসাইট তৈরি করতে হয়? কিভাবে সাজাতে হয়? কিভাবে আর্টিকেল লিখতে হয়? কিভাবে ব্লগিং করে আয় করতে হয় ইত্যাদি অনেক কিছু। তবে আজকের আর্টিকেলটি যারা সদ্য ব্লগিং শুরু করেছেন বা যারা শুরু করার কথা ভাবছেন তাদের জন্য। 

আজকের আর্টিকেলে এমন কিছু সিক্রেট ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করবো যেটা নতুন ব্লগারদের জন্য খুবই হেল্পফুল হবে এবং যারা ব্লগিং শুরুর কথা ভাবতেছেন তাদের জন্যও খুব উপকারী। 

আমার ব্লগিং যাত্রার ছোট একটা গল্প

আপনারা যারা ব্লগিং এখনও শুরু করেন নি তাদেরকে আমার ব্লগিং শুরুর ছোট একটা গল্প শেয়ার করলে খুব সহজে ব্লগিং শুরুর অনুপ্রেরনা পাবেন। শুরুর দিতে আমি ব্লগিং এ কিছুই বুঝতাম না। শুধু এতটুকু জানতাম যে ব্লগিং করে টাকা আয় করা যায়। সেটা প্রায় দুই বছর আগের কথা। আজ ২০২৩ সালে আমি এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতেছি। তখন স্বাস্থ্য বিষয়ক একটা ওয়েবসাইট রেডি করেছিলাম। লেখালেখি সম্পর্কে আইডিয়া ছিল না। বিভিন্ন বই পুস্তক থেকে বিভিন্ন লেখা নিয়ে একটার সাথে অন্যটা মিশিয়ে ছোট ছোট আর্টিকেল লিখতাম। কয়েকমাস যাওয়ার পর বুঝতে পারছিলাম যে, আমাকে দিয়ে ব্লগিং হবে না। আর ওই ব্লগ সাইটটাকে বেশি দুর এগিয়ে নিতে পারলাম না। তাই ওটা ছেড়ে দিলাম।

এরপর আরো দুই বছর চলে গেলো। ভাবলাম এভাবে আর ব্লগিং শুরু করতে পারবো না। সময়ও যাবে টাকাও যাবে। তাই অন্যদিকে মনোযোগ দিলাম। পেশায় এখনও একজন ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে চাই এই ধরনে মনমানসিকতা নিয়ে থাকতাম। কিন্তু কখনও কিছু করতে পারি নাই। দুই বছর পর ২০২৩ সালে জানতে পারলাম নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম এসেছে যেটা দিয়ে সহজেই অনেক কাজ করিয়ে নেওয়া যায়, আর্টিকেল লিখতে সহযোগীতা করে ইত্যাদি।এটা আমাদের লাইফের কাজকে এগিয়ে নিতে অনেক সহযোগীতা করলেও আমাদের কাজের সাথে এখনও কিন্তু পুরোপুরি খাপ খায়নি। তবুও ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রানিত হয়ে একটা ব্লগিং ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটার সাহায্য নিয়ে আর্টিকেল লেখা শুরু করলাম। 

See also  কিভাবে দক্ষতা অর্জন করবেন? ফ্রি কোর্স বনাম পেইড কোর্স Free course vs paid course

অনেকগুলো লিখে ফেলেছি। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না। কথায় আছে না যে, যেটা বুঝো না সেটা করতে যেয়ো না। বিপদ হতে পারে। তেমন ই কিছু করতে গিয়েছিলাম। ইংরেজীতে খুব বেশি ডিমান্ড এমন বিষয়ে লিখালেখি শুরু করি কিন্তু সেই বিষয়ে তেমন কোনো ধারনা ছিল না। অনেকগুলো আর্টিকেল লিখার পর যখন কোনো সাড়া শব্দ নাই তখন ভাবলাম। এটা তো আমার বিষয়ের বাহিরে। এটা নিয়ে আর আগানো যাবে না। আমাকে এমন কিছু করতে হবে যেটা আমি ভালো বুঝি। যেটা নিয়ে আমি লিখালেখি করতে পারবো, যেটা আমার সাথে যায়, এর পর এই ওয়েবসাইট (সরকারি সেবা.কম) শুরু করি। আর আপনার কাছে ব্লগিং এ সফল হওয়ার উপায় আর্টিকেলটি পৌছে দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কোনো একদিন সময় পেলে পুরো লাইফ স্টোরি টা শেয়ার করবো।

কিভাবে ব্লগিং করে সফল হওয়া যায়, ব্লগিং এ  সফল হওয়ার উপায়  Blogging Success Tips Bangla
কিভাবে ব্লগিং করে সফল হওয়া যায়

ব্লগিং এ সফল হওয়ার ১০ টি উপায়

ব্লগিং শুরু করতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া

আমাদের মধ্যে বর্তমানে এমন অনেক নতুন ব্লগার আছে যারা ব্লগিং এর তেমন কোনো উদ্দেশ্যে নিয়ে ব্লগিং শুরু করেনি। তাদের মধ্যে অনেকেই এমন উদ্দেশ্যে নিয়ে শুরু করেছে যে, আমার একটা ওয়েবসাইট থাকবে, এটার মধ্যে আমার বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য থাকবে। আমি আমার বিভিন্ন ঘুরাঘুরির ছবি আপলোড করবো। বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার দিবো। মাঝে মাঝে কিছু মন চাইলে লিখবো। মন চাইলে লিখবো না। আবার ব্লগিং করে টাকা আয়ের চিন্তাও করবো। কিন্তু বিশ্বাস করে এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে ব্লগিং শুরু করলে কিন্তু সফল ব্লগার হওয়া যাবেনা। শুধু আপনার একটা ওয়েবসাইট ই থাকবে যেটা শুধু আপনি আর আপনার কয়েকজন বন্ধু ভিজিট করবে। মনের শখটা পূরণ হবে শুধু। তাই সঠিক পরিকল্পনা, এবং ব্লগিং সম্পর্কে বেসিক জেনে ও এটার ভবিষ্যৎ কি ইত্যাদি বুঝে তবেই ব্লগিং শুরু করা উচিৎ।

See also  আর্টিকেল লেখার নিয়ম, ইউনিক আর্টিকেল কিভাবে লিখবেন, how to write Unique & quality article

নিয়মিত পোস্ট করা

আপনি যদি নতুন ব্লগিং শুরু করে থাকেন তাহলে আপনার উচিৎ নিয়মিত পোস্ট করে যাওয়া। নিয়মিত পোস্ট করা অর্থ এই নয় যে, আপনি ফেইসবুকে যেভাবে পোস্ট করেন সেভাবে পোস্ট করা। পোস্ট অবশ্যই মানসম্মত ও বড় হতে হবে। অবশ্যই চেষ্টা করবেন পোস্ট যেন কোয়ালিটিফুল ও ইউনিক হয়। তাই একটু ভালো করে গবেষনা করে কিওয়ার্ড যাচাই করে পোস্ট করবেন। কখনই অন্যের পোস্ট কপি করবেন না। চেষ্টা করবেন সম্পুন্ন পোস্ট নিজে থেকে লিখবে। একটু ভেবে দেখুন কিভাবে মানুষ নিজে থেকে লিখে! আপনিও লিখতে পারবেন কারন আপনিও মানুষ।

ভিজিটর আসবে অপেক্ষা করুন

আপনি সদ্য ব্লগিং শুরু করেছেন। আপনি নতুন। আপনার ওয়েবসাইটাও নতুন। নতুন মানুষকে চিনতে একটু সময় লাগবেই তাই না। প্রথম দিনই তো আপনার ওয়েবসাইট র‌্যাংক করবে না। মন দিয়ে পোস্ট করতে থাকেন। ইনশাআল্লাহ কয়েকদিন যাওয়ার পর আস্তে আস্তে ভিজিটর আসতে শুরু করবে। তবে অবশ্যই ভালো ভাবে এস.ই.ও করতে হবে।

শুরুতেই টাকা আয়ের চিন্তা বাদ দিন

আপনাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা কিছুদিন ব্লগিং করার পর ব্লগ থেকে টাকা আয়ের চিন্তা শুরু করেন। কিন্তু নতুন ব্লগ সাইট থেকে শুরুতেই টাকা আয়ের চিন্তা না করা। কারন একটা ওয়েবসাইট রেডি না হওয়া পর্যন্ত আয় করতে পারবেন না। তাই শুরুতেই টাকা আয়ের চিন্তা করলে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হ্যাঁ আপনি অবশ্যই টাকা আয় করতে পারবেন যেজন্য অবশ্যই আপনাকে মেধা ও শ্রম দিয়ে লেগে থাকতে হবে। প্রচুর আর্টিকেল লিখে যেতে হবে। তবেই একদিন ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।

একটা ব্লগ সাইট নিয়ে কাজ করা

ব্লগিং নিয়ে অনেকের ইচ্ছা থাকে আকাশ সমান। আর সেই চিন্তাধারা থেকে নতুন ব্লগাররা শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটা ব্লগ সাইট নিয়ে কাজ করা। এতে কোনোটাতেই ভালো করে সময় দিতে পারে না। একই সাথে একটা ব্লগ খুলে টেক বিষয়ে, একটা হেলথ বিষয়ে, একটা নিউজ পত্রিকা নিয়ে। কিন্তু নতুন সময় কখনই এমন করা যাবে না। যে কোনো একটা বিষয় যেটা ভালো বুঝেন সেটা নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেন। কখনই দুই নৌকায় পা দিতে যাবেন না। ফলাফল ভালো হবে না। 

ভালো ভাবে এস.ই.ও (SEO) করা

এস.ই.ও এর পূর্ণরূপ তো সবাই জানেন কিন্তু এর পূর্ণব্যবহার কয়জনই বা জানেন। ব্লগিং করাটা বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং। তাই গুগলে ওয়েবসাইটকে র‌্যাংকিং এ রাখতে এস.ই.ও এর বিকল্প নাই। আপনি হয়তো এস.ই.ও জানেন কিন্তু অলসতার জন্য এস.ই.ও করেন না। এটা একদম ই ঠিক না। হটাৎ একদিন দেখবেন একটা পোস্ট এ ভিজিটর আসা শুরু করছে । তখন ভাববেন যদি এটা আরো ভালো করে এস.ই.ও করে পোস্ট করতাম তাহলে আরো বেশি ভিজিটর পেতাম। তাই যদি এস.ই.ও জানেন তাহলে প্রত্যেকটা পোস্ট ভালো করে এস.ই.ও করেন। আর এস.ই.ও না জানলে এখনই শেখা শুরু করুন। 

See also  মোবাইল নাম্বার দিয়ে পরিচয় বের করা, কিভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে পরিচয় বের করা যায়

আর্টিকেল কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব দেওয়া

ব্লগ সাইট শুরুর দিকে এলোপাতারি পোস্ট করা যাবে না। অবশ্যই কোয়লিটিফুল পোস্ট সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে হবে। পোস্ট করেই কাউন্ট করবেন না যে, কয়টা পোস্ট করলাম বরং এটা কাউন্ট করুন যে, একটা পোস্ট আমি কতটা তথ্যবহুল ও গুরুত্ব দিয়ে লিখলাম।

সাইটের থিম (টেমপ্লেট) বার বার চেঞ্জ করবেন না

অনেক নতুন ব্লগার আছেন যারা বারবার সাইটের থিম (টেমপ্লেট) প্লাগ-ইন, উইজেট ইত্যাদি চেঞ্জ করে করে দেখেন যে, সাইট কেমন দেখায়, কেমন কাজ করে, এই থিম টা কেমন লাগে, না এটা ভালো লাগছে না চেঞ্জ করে অন্যটা দেই ওটা হয়তো ভালো লাগবে। কিন্তু প্রথমে ভালো একটা থিম বাছাই করার পর বারবার চেঞ্জ করা উচিৎ নয়। গুগল একটা সাইটকে ক্রল করে ইনডেক্স করে। বার বার থিম, মেনু চেঞ্জ করলে গুগলকে সাইট বারবার আপডেট করাতে হয় আপনার ডিজাইন অনুসারে এতে এস.ই.ও তে সমস্যা হয়। ইউজার একেক সময় একেক ডিজাইন দেখে বিব্রত হয়। তাই সাদা সিধে ইউজার ফ্রেন্ডলী একটা সাইট নিয়ে কাজ করতে থাকেন। বারবার এগুলো চেঞ্জ করলে আর্টিকেল লিখবেন কখন?

সাইট নিয়ে দিধার মধ্যে থাকবেন না

নতুন ব্লগাররা সাইটে ভিজিটর না পেয়ে হতাশ হয়ে যান। এতে সাইটের টপিক চেঞ্জ করতে থাকেন। ভাবতে থাকেন এই বিষয় বাদ দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে লিখি তাহলে হয়তো বেশি ভিজিটর পাওয়া যাবে। কিন্তু আসলে ঘটনা টা উল্টো ঘটে। 

তাই বারবার নিশ না পাল্টিয়ে আপনি যেই বিষয়ে ব্লগিং শুরু করেছেন সেই বিষয়ে কোয়ালিটিফুল ও মানসম্মত পোস্ট করতে থাকুন। একসময় আস্তে আস্তে ভিজিটর আসতে ‍শুরু করবে। দেখবেন একদিন আপনিও সফল হতে পারবেন। 

শেষ কথা

উপরে ৯ টা উপায় বললেও শেষ কথা হলো ১০ নম্বর উপায়। দেখুন আপনার ব্লগ সাইট টা আপনার স্বপ্ন। অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে ব্লগিং শুরু করেছেন তাই ব্লগ সাইটটাকে অবহেলায় ফেলে না রেখে মন দিয়ে এখনই কাজ শুরু করুন। অবহেলা করলে আপনার সময় চলে যাবে, ডোমেইন এর মেয়াদ ফুরিয়ে আসবে। তাই সময়টাকে কাজে লাগান। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এর স্বপ্ন আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।