বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা পরিশোধ করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়ীত্ব। তবে অনেকেই জানে না কিভাবে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হয়। কিভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করবেন সেটা নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
দেশের প্রত্যেক সুনাগরিকের উচিৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমির খাজনা পরিশোধ করা। ইতি পূর্বে ইউনিয়ন পরিশোধ বা উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে ভূমি মন্ত্রনালয় কর্তৃক ঘোষনা করা হয়েছে যে এখন থেকে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করা অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে আজকের আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন কিভাবে অনলাইনে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করবেন।
ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা কি?
ভূমি উন্নয়ন কর হলো ভূমি সংক্রান্ত জমির কর বা খাজনা। যেটা আগের আমলে জমিদারগন জমির মালিকদের নিকট থেকে জমির খাজনা আদায় করে থাকতো যা এখন সরকারি ভাবে জমির জন্য খাজনা পরিশোধ করতে হয়। দেশের সুনাগরিক হিসেবে জমির ভোগ দখলের অধিকার পাওয়ার জন্য প্রত্যেক জমির মালিককে জমির নির্দিষ্ট পরিমান খাজনা পরিশোধ করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর হলো জমি ভোগ দখলের অধিকার। জমির মালিকানা সুবিধা পাওয়ার জন্য জমির কর পরিশোধ করতে হয়।
ভূমি উন্নয়ন, ভূমি গবেষনা, রক্ষণাবেক্ষন ইত্যাদির উন্নয়নে প্রত্যেক নাগরিকদের তাদের নিজস্ব মালিকানার জমির খাজনা বা কর পরিশোধ করতে হয়।
জমির খাজনা দিতে কি কি লাগে?
ইতিপূর্বে জমির খাজনা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ উপজেলা ভূমি অফিসে যেতে হতো। বর্তমানে সেই কাগজপত্র থাকলে ঘরে বসেই জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
- জমির খতিয়ান নম্বর
- জমির দাগের তথ্য
- সর্বশেষ (বিআরএস) পর্চা
- যার নামে পর্চা তার জাতীয় পরিচয় পত্র
- অনলাইন পেমেন্ট ও ভেরিফিকেশন এর জন্য মোবাইল নম্বর
জমির খাজনা বা কর কিভাবে দিবো?
বর্তমানে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জমির খাজনা দেওয়ার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত আপনি ভূমি উন্নয়ন কর এর ওয়েবসাইট নাগরিক কর্নার থেকে পেমেন্ট করুন অপশন ব্যবহার করে সরাসরি খাজনা দিতে পারবেন। দ্বিতীয়ত আপনি চাইলে ভূমি উন্নয়ন কর এর মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেও কর দিতে পারবেন।
![]() |
ভূমি উন্নয়ন কর: জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম |
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করার নিয়ম
যদিও ঘরে বসে আপনি অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন তবে এটি সয়ংক্রিয় ভাবে সব জায়গায় এখনও পুরোপুরি ভাবে চালু হয়নি। অর্থাৎ আপনি যদি অনলাইনে খাজনা দিতে চান তাহলে ভূমি অফিস থেকে কিছু ক্ষেত্রে আপনার আবেদন গ্রহন করাতে হতে পারে। আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে তখনই আপনি আপনার মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
অনলাইনে খাজনা দেওয়ার জন্য আপনি সর্বপ্রথম ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে একটি নাগরিক একাউন্ট তৈরি করে নিন। তারপর আপনার প্রফাইল সম্পন্ন করুন। এরপর আপনাকে ভূমি অফিস থেকে একটি আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন গৃহিত হলে তখনই আপনি আপনার নগরিক একাউন্টে লগইন করে খাজনা পরিশোধ এর অপশন পেয়ে যাবেন।
সম্পুর্ণ বিষয়টি ছবি সহ বিস্তারিত দেখানো হলোঃ
ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে নিবন্ধন ও লগইন
ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সিস্টেম: নগরিক নিবন্ধন লিংকঃ https://ldtax.gov.bd/citizen/register
![]() |
ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সিস্টেম |
এখানে আপনার মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ক্লিক করে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন করুন করে নাগরিক একাউন্ট তৈরি করুন।
![]() |
নাগরিক লগইন: ভূমি উন্নয়ন কর |
একাউন্ট তৈরি করা হয়ে গেলে নাগরিক লগইন অপশন ব্যবহার করে আপনার মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট লগইন করে নিন। লগইন হয়ে গেলে নিচের মত একটি ড্যাসবোর্ড দেখতে পারবেন।
![]() |
ভূমি উন্নয়ন কর নাগরিক লগইন হোমপেজ |
লগইন করার পর খতিয়ান অপশনে ক্লিক করুন।
এবং যেই খতিয়ান এর খাজনা দিতে চান সেই খতিয়ান যুক্ত করুন। খতিয়ান যুক্ত করার জন্য:
- আপনার বিভাগ সিলেক্ট করুন
- জেলা সিলেক্ট করুন
- উপজেলা/সার্কেল সিলেক্ট করুন
- মৌজা সিলেক্ট করুন
- সর্বশেষ খতিয়ান লিখুন
- হোল্ডিং নম্বর দিন
- ফাইল সংযুক্ত করুন (খতিয়ান বা দাখিলা)
- মালিকের ধরন সিলেক্ট করুন (নিজে মালিক থাকলে সেটা সিলেক্ট করুন উত্তরাধীকার সূত্রে পেয়ে থাকলে সেটা সিলেক্ট করুন)
সবকিছু সিলেক্ট করার পর সংরক্ষণ অপশনে ক্লিক করুন।
![]() |
নতুন খতিয়ান যুক্ত করুন |
এখানে (অপেক্ষমান) দেখাবে। এখানে খতিয়ান সংযুক্ত করার পর ভূমি অফিস কয়েকদিন সময় নেয় এটা যাচাই করার জন্য। যাচাই করার পর যদি তারা মনে করে যে সবকিছু ঠিক ঠাক আছে তখন ভূমি অফিস খাজনা দেওয়ার অনুমতি দেয়।
এখানে আপনি যতগুলো জমির খাজনা দিতে চান সবগুলো খতিয়ান সংযুক্ত করে নিন।
এরপর কয়েকদিন অপেক্ষা করুন। পুনরায় ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। বাম পাশের মেনু অপশন থেকে হোল্ডিং লেখার উপর ক্লিক করুন। আপনার খতিয়ানটি অনুমোদন পেলে এমন একটি পেজ শো করবে
![]() |
স্ট্যাটাস: অনুমোদিত- ভূমি উন্নয়ন কর |
আপনার নতুন খতিয়ান সংযুক্তি করার পর যদি স্ট্যাটাস অনুমোদিত হয় তাহলে আপনি খাজনা দিতে পারবেন আর অনুমোদিত না হলে আপনাকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর পরবর্তী ধাপে খাজনা দেওয়ার জন্য বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করুন নিচের মত একটি পেজ শো করবে।
![]() |
হোল্ডিং ও ভূমি উন্নয়ন করের তথ্য |
এবার আপনি এখানে সকল তথ্য দেখতে পারবেন। এখানে আপনি সর্বশেষ কত সালে কর পরিশোধ করেছেন এবং কত বছর কর দেওয়া বাকি আছে। সর্বমোট কত টাকা কর হয়েছে এবং বকেয়ার সুদ কত টাকা ইত্যাদি সকল তথ্য দেখাবে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করে আরো বিস্তারিত বিভিন্ন তথ্য দেখতে পারবেন।
এবার আপনি অনলাইন পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করুন।
![]() |
বিকাশ/নগদ বা আপনার পছন্দের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করুন |
এখানে আবেদন এর সার সংক্ষেপ দেখাবে। পরবর্তী ধাপে ক্লিক করে ই পেমেন্ট করুন। তারপর আপনার সামনে বিকাশ ব্যবহার করলে সেখান থেকে বিকাশ নম্বার ওটিপি কোড ও পিন নম্বর ব্যবহার করে পেমেন্ট কমপ্লিট করুন।
![]() |
ই- পেমেন্ট করুন |
পেমেন্ট সম্পন্ন করার পর আপনার সামনে এমন একটি লেখা শো করবে।
খাজনার রশিদ সংগ্রহ
![]() |
৭২ ঘন্টার মধ্যে দালিখা সংগ্রহ করতে পারবেন। |
অভিনন্দন আপনার কর প্রদান সফল হয়েছে। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে দাখিলাটি অনুমোদিত হবে। অনুমোদিত হলে দাখিলা মেনু থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
![]() |
দালিখা সংরক্ষণ |
প্রিন্ট বা PDF ক্লিক করে দাখিলা বা খাজনার রশিদ সংগ্রহ করে নিন। প্রিন্ট করে এই কপি আপনি জমির মালিকানার প্রমান হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন এবং এই খাজনার রশিদ আপনার কাছে থাকলে ভূমি অফিস থেকে কোনো রশিদ সংগ্রহ করতে হবে না। উপরোক্ত নিয়ম ফলো করে প্রতারণার থেকে বাঁচেতে পারবেন এবং জমির খতিয়ানের নির্দিষ্ট পরিমান খাজনা দিতে পারবেন।
ভূমি উন্নয়ন কর রশিদ নমুনা কপি