স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া, কিভাবে স্টক মালের ব্যবসা করবেন। Stock market Business way

স্টক মালের ব্যবসা আমাদের সবার নিকট অতি পরিচিত একটা শব্দ। অনেকেই এই ব্যবসাটিকে ভুসি মালের ব্যবসা অথবা রাখি মালের ব্যবসা নামেও চিনে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে এই ব্যবসা মজুদ ব্যবসা হিসেবেও পরিচিত। 

তবে নাম যেটাই হোক না কেন মূল কথা হল কিভাবে স্টক মালের ব্যবসা শুরু করবেন বা স্টক মালের ব্যবসা কিভাবে করা যায় এই নিয়ে আজকের আর্টিকেল। ব্যবসাকে আল্লাহ হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। কিন্তু অনেকেই স্টক মালের ব্যবসা হালাল নাকি হারাম এটা নিয়ে সন্দেহ থাকে। তবে এটা জেনে রাখুন যে স্টক মালের ব্যবসা হালাল ব্যবসা।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই হালাল ব্যবসাটিও হারাম হয়ে যায়। যেমন- মহামারী অথবা দুর্ভিক্ষের সময় অতিরিক্ত লাভ করার জন্য কেউ যদি পণ্য মজুদ বা স্টক করে এতে সাধারণ মানুষ কষ্ট ভোগান্তির শিকার হয় তাহলে সেটি হারাম ব্যবসা হিসেবে বিবেচিত হবে। 

স্টক মালের ব্যবসা

কিছুদিন আগের কথা চিন্তা করুন যখন পেঁয়াজের দাম বা লবণের দাম বা কাঁচামরিচের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল যার কারণে সাধারণ মানুষ কত ভোগান্তির শিকার হয়েছে তখন কিছু ব্যবসায়ী মহল অতিরিক্ত লাভ করার জন্য পেঁয়াজ, লবণ, স্টক করে রেখেছিল। যেটা কখনোই কাম্য নয়। এতে সাধারন জনগন ভোগান্তির স্বীকার হয়। 

আজকের আর্টিকেলে এমন ৭ টি মালের ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো আপনি সঠিক নিয়মে হালালভাবে করতে পারলে সফলতার মুখ দেখবেন ইনশাল্লাহ।

স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া, কিভাবে স্টক মালের ব্যবসা করবেন। Stock market Business way
স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া

ধান বা চালের স্টক ব্যবসা

ধান আমাদের প্রধান খাদ্য। প্রত্যেকদিন তিন বেলায় আমরা ভাত খেতে থাকি। তাই ধান বা চাল এটা কিন্তু সবারই প্রয়োজনীয় খাদ্য। নিঃসন্দেহে এই ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারেন। এটা এমন একটি খাবার যেটা ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত খেয়ে আসতেছি। 

ধানের মৌসুমে আপনি অল্প মূল্য প্রচুর ধান কিনে মজুদ রাখতে পারেন। সিজনের সময় এক বস্তা চাল ১৫০০ টাকায় কিনলেন। পরবর্তী সময়ে সেটি ১৬০০ বা ১৭০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে আপনার লাভ হয়ে যাবে। তবে কখনোই বেশি লাভের আশা করবেন না। কারণ কাঁচামালের দাম সব সময় উঠা নামা করে। বেশি লাভের আশা করে যদি বিক্রি না করেন পরবর্তীতে দাম কমেও যেতে পারে। আপনার লাভের তুলনায় ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। ধান বা চাল কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনবেন। 

বাদামের স্টক ব্যবসা

বাদাম এমন একটা মজাদার খাবার যেটা ছোট বড় প্রায় সবাই খায়। বিশেষ করে সময় কাটানোর জন্য বাদামের বিকল্প নেই। পার্কে স্কুলে কলেজে বন্ধুদের সাথে বাদাম খাওয়ার মজাই আলাদা। আষাঢ় শ্রাবণ দুই মাস বাদাম কিনে রাখার উপযুক্ত সময়।

এই মাসে বাদাম কিনে রাখলে পরবর্তীতে শীতকালে আপনি দ্বিগুণ লাভে বাদাম বিক্রি করতে পারবেন। বিশেষত উত্তরবঙ্গে বেশি বাদাম চাষ করা হয়। এখান থেকেও বাদাম কিনে বাজারজাত করতে পারেন। মজুদ করার সময় অবশ্যই শুকনো ও ইদুর পোকা মাকড় উপদ্রব যেন না হয় এমন জায়গায় সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন। বাদাম যেন পানিতে না ভিজে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

ভুট্টা বা গমের স্টক ব্যবসা

ধানের মত ভুট্টা, গম আমাদের অন্যতম খাদ্য। পিঠা-পুলি নাস্তা রুটি তৈরি করতে আটা-ময়দার বেশি ব্যবহার হয়। কম দামে সিজনের সময় আটা ময়দা ক্রয় করে এই লাভজনক ব্যবসাটি শুরু করা যেতে পারে। 

গম বা ভুট্টা এক বছরের মধ্যে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। যেহেতু ভুট্টা গম এগুলো বছরে একবারই চাষ হয় তাই সিজনে এগুলো কিনে রেখে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করতে পারলে ভালো পরিমান লাভ করা যাবে।

মসলা জাতীয় মালের স্টক ব্যবসা

প্রাচীন আমল থেকে বাঙালি জাতি মসলা প্রিয়। যে কোন খাবার সেটা আচার, ফুচকা, ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজু বুট মুড়ি, মুড়ি ভর্তা, সকল প্রকার ভাজি ইত্যাদি সকল খাবারে মসলা লাগবেই লাগবে। মসলা ছাড়া খাবারের টেস্ট কল্পনাই করা যায় না। 

যেহেতু মসলা ছাড়া কোন খাবারে রুচি আসেনা তাই মসলা জাতীয় খাদ্য যেমন দারুচিনি, গোল মরিচ, লবঙ্গ, এলাচি, জিরা ইত্যাদি খাদ্য কিনে মজুদ রাখতে পারেন। যখন দাম বাড়বে তখন বিক্রি করতে পারেন। তবে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

ডালের স্টক ব্যবসা

বাঙালির খাদ্য তালিকায় প্রায় সবারই ডাল থাকে। বাংলাদেশের অন্যতম নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য হচ্ছে ডাল। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, আবাসিক হোটেলে, ম্যাচে ডাল থাকবেই। লোকাল হোটেলে ডাল খাবার টা থাকবেই। ডালের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে মুগ ডাল, মসুর ডাল ছোলা মটরের ডাল, মাসকলাইয়ের ডাল, খেসারির ডাল ইত্যাদি অনেক ধরনের ডাল। 

বিভিন্ন মৌসুমীর বিভিন্ন রকমের ডাল চাষ হয়ে থাকে আপনি ডালের মৌসুম অনুযায়ী কম দামে কিনে পরবর্তীতে অন্য মৌসুমে সেই ডাল বেশি লাভে বিক্রি করতে পারবেন। 

সুপারির স্টক ব্যবসা

সংস্কৃতি প্রিয় জাতি বাঙালি হিসেবে প্রায় অনেকেরই পান-সুপারি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। মেহমান আপ্যায়ন, বিয়ে বাড়ি বা শশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় সাথে পান সুপারি নিয়ে যাওয়ার প্রচলন রয়েছে। মোটামুটি সারা বছরই কমবেশি পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সুপারি খেয়ে থাকে। কেউ শুকনা সুপারি বা কেউ কাঁচা সুপারি। আবার অনেকে মজানো সুপারি খেতে পছন্দ করে থাকে।

গাছ থেকে সুপারি পেরে শুকিয়ে সেটি বিক্রয় করা যেতে পারে অথবা পানিতে পচিয়ে বিক্রি করতে পারেন। এতে একটু গন্ধ হয় এবং খেতেও মজা হয় তাছাড়া দামও একটু বেশি থাকে। 

কাপরের স্টক ব্যবসা

অফ সীজনে কাপড়ের ব্যবসা খুবই জমজমাট। গরমের সময় শীতের কাপড়ের মূল্য কম থাকে এবং শীতের সময় গরমের কাপড়ের মূল্য কম থাকে। গরমের সময় যদি আপনি শীতকালীন পোশাক যেমন জ্যাকেট, ব্লেজার, হুডি, সোয়েটার ইত্যাদি কিনে স্টক করতে পারেন পরবর্তী শীতকালে এগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। 

স্টক মালের ব্যবসা কিভাবে করবেন?

স্টক বা পন্য মজুদের ক্ষেত্রে সব সময় শুকনো যেগুলো সহজে পচে যায় না এমন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে। যেগুলো সহজে পৌঁছে যায়, গলে যায়, নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো দ্রব্য এড়িয়ে চলবেন। পচনশীল দ্রব্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ খরচ বেশি হয়ে থাকে তাই এগুলোতে ঝুঁকিও বেশি থাকে।

আপনার যদি বেশি পুজি হয়ে থাকে তাহলে বিভিন্ন জাতের পণ্য স্টক করে রাখতে পারেন। এতে কোনো সময় একটি পণ্যের উপর সব সময় নির্ভরশীল থাকতে হবে না সিজন অনুসারে বিভিন্ন পণ্যকে কাজে লাগাতে পারবেন।

শেষ কথা

এই হচ্ছে স্টক মালের ব্যবসা বা মজুদ ব্যবসা যেটাই বলেন না কেন সেটা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। তবে অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করবেন না এবং কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না। এগুলো ইসলাম ধর্মে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সামান্য কিছু লাভের আশায় হালাল ব্যবসাকে হারামে রূপান্তর করলে যেমন অন্যের ক্ষতি হবে এছাড়াও আপনার নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবেন। এছাড়া আপনি অন্য মজুদ করার কারণে বিভিন্ন আইনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। 

তাই সব সময় চেষ্টা করবেন সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে হালাল ব্যবসা করতে।